বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৩২ পূর্বাহ্ন
রাকিবুল হাসান ফরহাদ
ময়মনসিংহের ত্রিশালে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই লাইসেন্সবিহীন একটি ইটভাটার কারণে কাকচর উত্তরপাড়া সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সারা বছরই নানা অসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন। একপাশে ইটভাটা ও অন্য তিনপাশে ফসলী জমি রয়েছে। এই ভাটার কারণে আশপাশের বসতি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। জমির টপসয়েল কেটে নিয়ে তা ইট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
তাছাড়া ইট পোড়ানোর কাজে বাধ্যতামূলক কয়লা ব্যবহার করার নিয়ম থাকলেও অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে চোরাইপথে কেটে আনা লাকড়ি। ফলে কোমলমতি শিশুরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিকে রয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে ফসলি জমি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ। তেমনি প্রতিবছর সরকার হারাচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব।
উপজেলার কাকচর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, কাকচর উত্তরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ ঘেঁষে মোঃ মজিবুর রহমানের মালিকানাধীন সোনার বাংলা নামক লাইসেন্স বিহীন ইভাটাটি অবস্থিত। ভাটার কার্বনডাই অক্সাইড ও ধোঁয়া পাশের ওই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৬৮ জন কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীসহ আশপাশের বসতি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে, আবাসিক ও জনবসতি, সংরক্ষিত এলাকার বনভূমি এবং জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা করা যাবেনা এবং এরী বনাঞ্চলের সীমারেখা হতে দুই কিলোমিটার দূরত্বে করতে হবে। বিধান রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর হতে ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসকের অনুমোদন বা লাইসেন্স না নিয়ে ইটভাটা চালু করা যাবেনা।
আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান থাকলেও তাদের রহস্যজনক কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন কোনো প্রকার পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।স্থানীয়রা অভিযোগ করেন উপজেলায় প্রায় ৫০টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটার বেশীরভাগ লাকরী দিয়ে ইট পোড়ানো হয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। কয়লার দাম বেশী হওয়ায় বেশ কিছু বাংলা ইটভাটায় রাত ২৪ঘন্টায় কাঠ দিয়ে ইট পুড়ানো হচ্ছে। অধিকাংশ ইটভাটা মালিক এসব আইনের তোয়াক্কা না করে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে অবৈধভাবে ফসলী জমির টপসয়েল ব্যবহার করে দেদারছে তাদের ইট বানিয়ে যাচ্ছেন। ফলে আশপাশ এলাকার আবাদি জমির উবর্রতা হাস ও বিভিন্ন প্রজাতিয় ফলজ, বনজ গাছপালাসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়েছে।
কাকচর গ্রামের লোকজন জানান, ইটভাটা থেকে নির্গত কার্বনডাই অক্সাইড ও সৃষ্ট কালো ধোঁয়া আর উড়ে আসা ধূলাবালিতে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শ্বাসকষ্টজনিত অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে বিদ্যালয়ের পাঠদানের পরিবেশ। তাছাড়া ইট ভাটার বিরূপ প্রভাবে আশপাশের এলাকায় ফলজ ও সবজিসহ কোনো ধরণের ফসলাদি ফলানো সম্ভব হচ্ছেনা।
অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ ইটভাটায় শিশু ও নারী শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হয়ে থাকে এমনকি ইট তৈরীতে ৬ থেকে ৭ ধরণের ভাইস ব্যবহার করা হয় এবং ইটের সাইজ ছোট-বড় করে প্রতিনিয়তই ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করা হ থাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ইটভাটা মালিক জানান, ত্রিশাল অধিকাংশ ইটভাটার হালনাগাদ লাইসেন্স নবায়ন নেই। কিভাবে চলে প্রশ্ন করা হলে তারা জানান,প্রতিটি ইটভাটা থেকে ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারীকে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়ে থাকে। জেলা প্রশাসক ও বনবিভাগ থেকে শুরু করে প্রতিটি সেক্টর ম্যানেজ করে থাকেন উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির নেতারা।
কাকচর উত্তরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কোহিনূর আক্তার রুমা জানান, ইটখলার কারণে শিক্ষার্থীদের ও আমাদের অনেক সমস্যা হয়। ধূলার কারণে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে বিদ্যালয়ে আসে না।
ময়মনসিংহ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাজিয়া উদ্দিন জানান, ত্রিশালের অধিকাংশ ইটভাটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে এবং বেশীর ভাগ ইটভাটার লাইসেন্স নেই। আমরা আগেও অভিযান পরিচালনা করেছি এবং এখনও অব্যহত আছে।